Sunday, September 11, 2016

তাজহাট জমিদার বাড়ি, রংপুর 

যে ভাবে যাবেন?:
ঢাকা থেকে এখানে আসতে হলে গাবতলী অথবা কল্যাণপুর থেকে সরাসরি রংপুরের বাসে আসতে পারেন। হানিফ, শ্যামলি, এস আর, টি আর পরিবহনসহ বেশ কিছু এসি – নন এসি ভালো বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া পড়বে ৫০০-১০০০ টাকা।
শহর থেকে তাজহাটের দূরত্ব মাত্র ৩ কি.মি.। অটো বা রিক্সা তে যেতে হবে।
থাকবেন কোথায়?:
রংপুর শহরে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো জেল রোডে অবস্থিত আর.ডি.আর এস। এখানে দ্বিশয্যা কক্ষের ভাড়া ১১০০ টাকা, এক শয্যা কক্ষের ভাড়া ৮০০ টাকা। ফোন ৬২৫৯৮, ৬২৮৬৩। রংপুরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের একটি বড় ধরনের মোটেল রয়েছে। এখানে সাধারণ দ্বিশয্যা কক্ষের ভাড়া ১০০০ টাকা, তাপ নিয়ন্ত্রিত দ্বিশয্যা কক্ষের ভাড়া ১৬০০ টাকা, ভিআইপি স্যুটের ভাড়া ২৮০০ টাকা। ফোন- ৬৩৬৮১, ৬২৮৯৪। শহরের জাহাজ কোম্পানির মোড়ে হোটেল শাহ আমানত। এখানে সাধারণ এক শয্যার কক্ষ ৩০০-৭০০ টাকা, সাধারণ দ্বিশয্যা কক্ষের ভাড়া ৪০০ টাকা, তাপ নিয়ন্ত্রিত দ্বিশয্যা কক্ষের ভাড়া ১০০০ টাকা, স্যুটের ভাড়া ১৬০০ টাকা। ফান- ৬৫৬৭৩। এছাড়াও রংপুরের অন্যান্য হোটেল হলো- জাহাজ কোম্পানির মোড়ে গোল্ডেন টাওয়ার, ফোন- ৬৫৯২০, ৬১১৬৯। থানা রোডে হোটেল তিলোত্তমা, ফোন- ৬৩৪৮২। জিএল রায় রোডে হোটেল পার্ক, ফোন- ৬৬৭১৮। ধাপ জেল রোডে হোটেল বিজয়, ফোন- ৬৫৮৭১। স্টেশন রোডে হোটেল চাঁদিমা, ফোন- ৬২০২৬। এসব হোটেলে ২০০-৮০০ টাকায় বিভিন্ন রকম কক্ষ রয়েছে। রংপুরের এন ডব্লিউ কোড ০৫২১।
ভ্রমণার্থীদের জন্য জমিদারবাড়ির দর্শনের সময়সূচি:
গ্রীষ্মকালীন (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর)- বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা
শীতকালীন (অক্টোবর-মার্চ)- ৯টা থেকে বিকেল ৫টা
রবিবার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবসসহ সরকারি সব ছুটির দিনে জমিদার বাড়ি জাদুঘর বন্ধ থাকে।
টিকেট প্রাপ্তিস্থানঃ জাদুঘরের গেটের পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার, জনপ্রতি টিকেট এর দাম বিশ টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশ মুল্যে নির্ধারন করা হয়েছে ৫ টাকা। সার্কভুক্ত বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য একশত টাকা এবং অন্যান্য বিদেশী দর্শকদের জন্য টিকেটের মূল্য দুইশত টাকা করে।
দেখার কি আছে?
বাংলাদেশে যে কয়টি সুবিশাল ও অনন্য সুন্দর স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে তাজহাট জমিদার বাড়ি অন্যতম। স্থাপত্যশৈলীতে ঢাকার আহসান মঞ্জিলের সাথে বেশ মিল রয়েছে এই জমিদার বাড়ির। জানা যায় রংপুরের মাহিগঞ্জ তাজহাট এলাকায় প্রজা হিতৈষী জমিদার গোবিন্দ লাল রায়ের পুত্র গোপাল লাল রায়ের বাড়িটি প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন। প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে চমৎকার এই স্থাপনা তৈরিতে। ৭৬.২০ মিটার দৈর্ঘ্য ভবনটি তৈরীতে ব্যবহার করা হয়েছে ইতালী থেকে আমদানিকৃত শ্বেত পাথর। ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এই বাড়িটি নির্মাণ করা হয় ১৯০৮ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে। ১৯৪৭ সালে জমিদার বাড়িটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তখন ৫৫ একর জমিসহ মুল ভবনটিতে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এরশাদের সরকার জমিদার বাড়িতে স্থাপন করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের রংপুর বেঞ্চ। ১৯৯২ সালে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রত্যাহার করার পর ১৯৯৫ সালে জমিদার বাড়িটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে ন্যস্ত করা হয়। ২০০৫ সালের ২০ মার্চ রংপুর জাদুঘর স্থানান্তর করা হয় তাজহাট জমিদার বাড়িতে।
রংপুর জাদুঘরে দুর্লভ প্রত্নসম্পদের মধ্যে রয়েছে মূল্যবান কষ্টি ও শিলামূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, শিবলিঙ্গ, সম্রাট আওরাঙ্গজেবের স্বহস্তে লেখা খুৎবা, ক্ষুদ্রাকার কোরআন শরিফ, কবি শেখ সাদীর স্বহস্তে লেখা কবিতা, প্রাচীন মুদ্রাসহ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ রকমের প্রত্নসম্পদ।
পুরো ভবনটিতে রয়েছে মোট ২৮টি কক্ষ। এখানে একটা গুপ্ত সিড়ি রয়েছে যা কোন সুড়ঙ্গের সাথে যুক্ত হয়ে ঘাঘট নদীতে মিলেছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারনে তা এখন বন্ধ।
প্রাসাদ চত্বরে ফুল-ফলের নানা গাছের সারি ছাড়াও একটা ছোট দিঘী রয়েছে। তার পাশেই রয়েছে বিশাল বাগান।

No comments:

Post a Comment